Personal Loan Rules 2025: ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এখন অনেকেই দ্রুত পার্সোনাল লোন নিয়ে থাকেন। বাড়ি সংস্কার, চিকিৎসা, শিক্ষা কিংবা জরুরি আর্থিক সমস্যার সমাধানে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। তবে, হঠাৎ লোন নিয়ে পরে সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি অনেক সময় থেকেই যায়। এই কারণে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) ২০২৫ সালে নতুন কিছু গাইডলাইন জারি করেছে, যাতে ঋণ নেওয়া হয় আরও স্বচ্ছ, নিরাপদ এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে। যদি এই নিয়মগুলো মানা না হয় তবে ভবিষ্যতে বিপদে পড়তে পারেন ঋণগ্রহীতা। চলুন দেখে নেওয়া যাক কী কী নতুন নিয়ম এনেছে RBI এবং এর গুরুত্ব কতটা।

Personal Loan Rules 2025

কী ফ্যাক্ট স্টেটমেন্ট (KFS) বাধ্যতামূলক

RBI নির্দেশ দিয়েছে, প্রতিটি ব্যাংক বা NBFC কে ঋণ অনুমোদনের আগে গ্রাহককে একটি Key Fact Statement (KFS) দিতে হবে। এতে থাকবে সুদের হার, প্রসেসিং ফি, লোনের মেয়াদ, মোট খরচ, EMI পরিমাণ এবং অন্যান্য চার্জ। এই নথি হাতে পেলে গ্রাহক সহজেই তুলনা করতে পারবেন কোন অফার তার জন্য ভালো। লুকানো খরচ বা বিভ্রান্তি আর সম্ভব হবে না।

লোন-টু-ইনকাম রেশিও নির্ধারণ

নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, একজন ঋণগ্রহীতার মাসিক EMI তার আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। এর ফলে কেউ চাইলেও অতিরিক্ত লোন নিয়ে নিজেকে আর্থিক চাপে ফেলতে পারবেন না। এটি ঋণগ্রহীতার আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং অতিরিক্ত ঋণের ঝুঁকি কমাবে।

সিবিল স্কোর ও ঋণের যোগ্যতা

ঋণ পেতে এখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো CIBIL স্কোর। RBI জানিয়েছে, স্কোর যত বেশি (৭৫০ বা তার বেশি), ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা তত বেশি। একই সঙ্গে একাধিক ঋণের জন্য একসঙ্গে আবেদন করলে স্কোর কমে যেতে পারে। তাই আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সময়মতো EMI পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি।

ডিজিটাল লোনে তথ্য সুরক্ষা

ডিজিটাল লোন প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার ও সংরক্ষণ নিয়ে RBI কঠোর নিয়ম করেছে। গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না এবং সব ডেটা ভারতে সংরক্ষণ করতে হবে। বিদেশে তথ্য হস্তান্তর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া প্রতিটি ঋণগ্রহীতাকে কুলিং-অফ পিরিয়ড দেওয়া হবে যাতে প্রয়োজনে তিনি লোন বাতিল বা পরিবর্তনের সুযোগ পান।

ঋণ আদায়ের নিয়ম

রিকভারি এজেন্টদের উপরও কঠোর নিয়ম চাপিয়েছে RBI। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কাউকে হয়রানি, ভয় দেখানো বা মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং অভিযোগ থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে সমাধান করতে হবে। এর ফলে ঋণ আদায় প্রক্রিয়া অনেক বেশি মানবিক ও স্বচ্ছ হবে।

প্রিপেমেন্ট ও ফোরক্লোজার সুবিধা

গ্রাহক চাইলে নির্ধারিত সময়ের আগেই লোন শোধ করতে পারবেন। তবে ব্যাংক বা NBFC কে আগে থেকেই জানাতে হবে চার্জ কত হতে পারে। এই নিয়মে ঋণগ্রহীতার জন্য খোলামেলা পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং ঋণ শোধের ক্ষেত্রে নমনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঋণগ্রহীতার দায়িত্ব

নিয়ম শুধু ব্যাংকের জন্য নয়, ঋণগ্রহীতারও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সঠিক তথ্য প্রদান, সময়মতো EMI শোধ করা, এবং CIBIL স্কোর বজায় রাখা এগুলোর মধ্যে অন্যতম। অবহেলা করলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে যদি চেক বাউন্স বা EMI পরিশোধে ব্যর্থতা ঘটে।

পার্সোনাল লোনের বাজার যেমন দ্রুত বাড়ছে, তেমনি ঋণ সংক্রান্ত জটিলতাও অনেক বাড়ছে। RBI-র নতুন গাইডলাইনগুলো গ্রাহক ও ঋণদাতার মধ্যে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রাখবে। KFS, কুলিং-অফ পিরিয়ড, তথ্য সুরক্ষা এবং ন্যায্য রিকভারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকরা আরও নিরাপদ থাকবেন। তবে নিয়ম মেনে না চললে সমস্যায় পড়তে হবে গ্রাহককেই। তাই ঋণ নেওয়ার আগে প্রতিটি শর্ত মনোযোগ দিয়ে পড়া এবং EMI শোধের শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়ম মানলে লোন হবে উপকারী, না মানলে বিপদের সম্ভাবনা অনিবার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *